ত্যাগ-কুরবানি-সফলতা জালিমের পরিণতি। পর্ব ০১

মানবসভ্যতার বিকাশে ত্যাগ ও কোরবানির গুরুত্ব অপরিসীম। সাধারণভাবে কোন সমাজের সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে ত্যাগ ও কোরবানির ওপর। ত্যাগ ও কোরবানি ব্যতিরেকে কোন সমাজ ও সভ্যতা বিনির্মাণ করা সম্ভব নয়। এমনকি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সাফল্যের পেছনেও থাকে কারো না কারো কোরবানি। পিতা-মাতার কোরবানির বদৌলতে সন্তান মানুষ হয়। ইসলামী আন্দোলনের সাফল্যের জন্য ত্যাগ ও কোরবানি অপরিহার্য, মহান রাব্বুল আলামিন জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করার জন্য বলেছেন, রাসূল (সা)-এর ২৩ বছরের জিন্দেগি ত্যাগ ও কোরবানির উজ্জ্বল নমুনা, সাহাবীগণ ত্যাগ ও কোরবানির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, সকল নবী-রাসূলকে ত্যাগ ও কোরবানির পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে হয়েছে, যুগে যুগে যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেছেন তাদেরকে ত্যাগ ও কোরবানির নজরানা পেশ করতে হয়েছে, চলমান আন্দোলনেও ত্যাগ ও কোরবানির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। আজকের যুগেও যারা সত্য ও ন্যায়ের পথে চলছেন তারা জালিমদের জুলুমের শিকার হচ্ছেন। পক্ষান্তরে জালিমদের শাস্তি দুনিয়াতে ও আখেরাতে অবধারিত। মহাগ্রন্থ আল কুরআনের অনেক জায়গায় সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন যে তিনি জালিমকে পছন্দ করেন না। তিনি জালিমকে আখিরাতে কঠিন শাস্তি দেবেন। আর দুনিয়াতেও আবু লাহাব, ফেরাউন-শাদ্দাদ, নমরুদসহ কিছু জালিমের করুণ পরিণতি এবং আদ-সামুদসহ বিভিন্ন জাতি ধ্বংস হওয়ার ঘটনা দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

ঈমানের পরীক্ষা অবশ্যম্ভাবী
কুরআনে ব্যবহৃত কোরবানির খুব কাছের শব্দ হচ্ছে নুসুক। সূরা আল-আনআম আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “আপনি বলুন, নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার নুসুক, আমার হায়াত ও আমার মউত আল্লাহ রব্বুল আলামিনের জন্য।” (কুরআন ৬ : ১৬২) আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের মাঝে মধ্যে ভালো ও মন্দ অবস্থায় ফেলে পরীক্ষা করা তাঁর চিরাচরিত নিয়ম। তিনি নানা কারণে নানাভাবে ঈমানদারদের পরীক্ষা করেন। ঈমানের দাবিতে সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদীদের মধ্যে তিনি পরীক্ষা করে বাছাই করে নেবেন। সূরা আনকাবুতে আল্লাহতায়ালা বলেন “মানুষ কি মনে করে যে, তারা এ কথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা ঈমান এনেছি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে। (২৯ : ২-৩) অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি এবং ফল ফসলের বিনষ্টের মাধ্যমে। (সূরা আল বাকারা : ১৫৫) মানুষেরা কি মনে করেছে যে, আমরা ঈমান এনেছি এ কথা বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদের কোন পরীক্ষা হবে না? অথচ আমি তাদের পূর্ববর্তীদেরকে পরীক্ষা করেছি। শেষ পর্যন্ত তোমাদের সকলকে আমাদের দিকেই আসতে হবে। (সূরা আম্বিয়া : ৩৫) প্রত্যেক নবী, রাসূল, সাহাবায়ে কেরাম, তাবে তাবিঈন, মুমিনগণ পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন।

ইসলামে কোরবানির গুরুত্ব
ইসলাম শুধুমাত্র একটা বিশ্বাস ও কিছু আচার অনুষ্ঠানের সমষ্টির নাম নয়; এটি বরং এক চিরন্তন সংগ্রামের পথ। একটা মৌখিক ঘোষণা দানের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি ইসলামে প্রবেশ করে কিন্তু তার ইসলামে টিকে থাকার জন্য দরকার হয় বিশ্বাসের বাস্তব সাক্ষ্য দানের। “আর এভাবে আমি তোমাদেরকে একটি মধ্যপন্থী উম্মত হিসেবে সৃষ্টি করেছি যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্য এবং যাতে রসূলও সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য (২: ১৪৩) এটা এমন একটা পথ যে পথে চলতে গিয়ে কোন ব্যক্তিকে প্রতিনিয়ত মিথ্যা-বাতিলের সৈনিকের মোকাবেলা করতে হয় আল্লাহর আনুগত্যের পথে টিকে থাকার নিমিত্তে, ঈমান যত বড় পরীক্ষা তত বড় হবে এটা জেনেই ঈমানের দাবি করতে হবে। পূর্বেকার সকল নবী-রাসূল এবং ঈমানদারদের থেকে শিক্ষা নিতে হবে। সংগ্রাম সাধনা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে ঘোষণা করেছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া-তাআলা। মানুষকে কষ্টের মাঝেই সৃষ্টি করেছেন তিনি। “আমরা নিশ্চয়ই মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রমনির্ভর করে।” (৯০ : ৪) মানুষ চেষ্টা-সাধনা ছাড়া কিছুই অর্জন করতে পারে না বলেও জানিয়েছেন আমাদের রব। “মানুষের জন্য কিছুই নেই শুধু সেই (কল্যাণ) ছাড়া যার জন্য সে চেষ্টা করে।” (৫৩ : ৪৪)

কোরবানি ব্যতিরেকে সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়
আল্লাহতায়ালা যে সফলতার ওয়াদা করেছেন তা কোরবানি ব্যতিরেকে সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। তিনি পরীক্ষা করে দেখবেন সাফল্য পাওয়ার সত্যিকার উপযুক্ত কারা। “তোমাদের কি এই ধারণা যে, তোমরা জান্নাতে চলে যাবে, অথচ সে লোকদের অবস্থা অতিক্রম করনি যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়েছে। তাদের আক্রমণ করেছিল দারুণ বিপর্যয় এবং চরম দুর্দশা, আর তারা কেঁপেছিল, শেষ পর্যন্ত রাসূল ও তাঁর সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তারা বলল ‘আল্লাহ্সাহায্য কখন আসবে?’ আল্লাহ্সাহায্য অবশ্যই নিকটবর্তী।” (২ : ২১৪) আল্লাহ সবরকারী ঈমানদার ও তাদের সংগ্রামী জীবনের পরীক্ষা করবেন। “তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্যশীল।” (৩ : ১৪২) জিহাদ এবং সংগ্রাম মূলত ঈমানী জিন্দেগির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। “নিশ্চয়ই ঈমানদার তো তারা যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের উপর এবং এরপর সন্দেহে নিপতিত হয়নি; আর জিহাদ করেছে নিজেদের সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে। এরাই হচ্ছে (ঈমানের দাবিতে) সত্যবাদী। (৪৯ : ১৫)

কোরবানি মুমিনকে সাহসিকতার উচ্চতম মাত্রায় পৌঁছে দেয়
কোরবানির মানসিকতা একটা অন্তর্গত সম্পদ যা মুমিনকে সাহসিকতার উচ্চতম মাত্রায় পৌঁছে দেয়। এ জন্য আমরা দেখতে পাই ময়দানে আহত হওয়ার পরও যখন আবার কোরবানির ডাক আসে তখন তারা পিছপা হন না। আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেছেন এবং তাদের জন্য বিরাট প্রতিদানের ওয়াদা করেছেন, “যারা আহত হয়ে পড়ার পরও আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্য করেছে, তাদের মধ্যে যারা সৎ ও পরহেজগার, তাদের জন্য রয়েছে মহান সওয়াব। যাদেরকে লোকেরা বলেছে যে, তোমাদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য লোকেরা সমাবেশ করেছে বহু সাজ-সরঞ্জাম; সুতরাং তাদের ভয় কর। তখন তাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ়তর হয়ে যায় এবং তারা বলে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; কতই না চমৎকার কামিয়াবিদানকারী।” (আলে ইমরান, ৩ : ১৭২-১৭৩) এখন তোমরা জেনে ফেলেছো, সে আসলে শয়তান ছিল, তার বন্ধুদের অনর্থক ভয় দেখাচ্ছিলো। কাজেই আগামীতে তোমরা মানুষকে ভয় করো না, আমাকে ভয় করো, যদি তোমরা যথার্থ ঈমানদার হয়ে থাকো। (আলে ইমরান, ১৭৫) কোরবানির মানসিকতা একজন মানুষের মাঝে ধৈর্য, সহনশীলতা, অধ্যবসায়, বিজয় ও সাফল্যের ব্যাপারে আশাবাদিতা, ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞা জাতীয় সুমহান নৈতিক গুণাবলি সৃষ্টিতে বিরাট ভূমিকা পালন করে। সাময়িকভাবে বিপর্যস্ত হবার পরও বিজয়ের আশা জাগিয়েছেন আল্লাহ ঈমানদারদের মাঝে। “আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে।
কোরবানি সামষ্টিক শৃঙ্খলার জন্য জরুরি
ইসলাম গড়ে তুলতে চায় একটা সামষ্টিক শৃঙ্খলাধীন সমাজ যা সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ থেকে দীনের প্রসারে নিবেদিত থাকবে আল্লাহর রাস্তায় অবিরত সংগ্রামের মাধ্যমে। আল্লাহ তাআলা বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ ভালবাসেন তাদেরকে যারা তাঁর রাস্তায় এমনভাবে কাতারবদ্ধ হয়ে লড়াই করে যেন এক সীসাঢালা দালান।” (সূরা আস-সফ, ৬১: ৪) এই প্রাচীর গড়ার জন্য দরকার হয় কিছু ইট বা কংক্রিটকে মাটির নিচে ভিত হিসেবে স্থাপন করা, কিছু ইট বা ব্লককে উপরে স্থাপন করা হয় একটার ওপর আরেকটা যেগুলোর মধ্যে বন্ধন তৈরি করা হয় ভাঙা ইট, কংক্রিট ও সিমেন্ট দিয়ে। মাটির নিচে স্থাপন করা ইটগুলো আমাদের শহীদদের ন্যায়; মাটির উপরে ভাঙা ইট ও কংক্রিট, ইত্যাদি আমাদের যখমীদের ন্যায়; আর অক্ষতরা অন্য সব সংগ্রামীরা। এদের সবাইকে দিয়েই তৈরি করা হয় ইসলামী আন্দোলনের মজবুত প্রাসাদ। এখানে সব পক্ষের ত্যাগ ও কোরবানির বদৌলতে গড়ে উঠেছে এই প্রাসাদ।

কী কী কোরবানি করতে হবে
ক. সময়ের কোরবানি : সময় জীবনের অংশ। সময় মূলত আমলেরই অংশ। তাই সময় কিভাবে ব্যয় করা হয় তা আল্লাহ তাআলা দেখতে চান। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, “মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ তাআলাকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামীকালের জন্য সে কী প্রেরণ করে তা চিন্তা করা। আল্লাহ তাআলাকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তাআলা সে সম্পর্কে খবর রাখেন।” (৫৯ : ১৮)
খ. দুনিয়াবি সম্পদ ও টাকা পয়সা : এসবের কোরবানির দাবি আল্লাহ তাআলা করেছেন। এ সমস্ত কিছু মানুষ ভালবাসে। কিন্তু আল্লাহর কাছে যা আছে তা এ থেকে উত্তম। “মানবকুলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী, সন্তান-সন্ততি, রাশিকৃত স্বর্ণ-রৌপ্য, চিহ্নিত অশ্ব, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত-খামারের মতো আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এসবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগ্য বস্তু। আল্লাহর নিকটই হলো উত্তম আশ্রয়। (৩ : ১৪) এসব ধ্বংসশীল এবং আল্লাহর নির্দেশমত এগুলোর ব্যবহার না করলে তিনি এগুলো ধ্বংস করে দেবেন। আল্লাহর রাস্তায় এ সমস্ত সম্পদের কোরবানি মূলত এগুলোতে বৃদ্ধি দান করে। তিনি বলেছেন, “যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধনসম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মতো, যা থেকে সাতটি শিষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শিষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ।” (২ : ২৬১) “এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা নিজেদের জন্য যা কিছু অগ্রে পাঠাবে, তা আল্লাহর কাছে উত্তম আকারে এবং পুরস্কার হিসেবে বর্ধিতরূপে পাবে।” (৭৩ : ২০)
গ. জীবনের কোরবানি ব্যতিরেকে ইসলাম কখনো বিজয় লাভ করেনি : আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে অনেককে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করে সম্মানিত করতে চান। মানুষ স্বভাবতই মরণশীল। মরণ থেকে কেউ পালিয়ে থাকতে পারবে না। এমনকি রাসূলগণও মৃত্যুবরণ করেন। মুহাম্মদ (সা) মৃত্যুবরণ করেছেন। “আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রাসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তাহলে কি তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তুত কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাদের সওয়াব দান করবেন। আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না- সে জন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে।” (৩ : ১৪৪-১৪৫) উহুদের বিপর্যয়ের পর মুনাফিকরা বলাবলি করছিল যে মুমিনরা যুদ্ধে না গেলে মারা যেতেন না। আল্লাহ তাআলা তাদের কথার প্রতিবাদ করেছেন নিচের আয়াতে। “তারা বলে আমাদের হাতে যদি কিছু করার থাকতো, তাহলে আমরা এখানে নিহত হতাম না। তুমি বল, তোমরা যদি নিজেদের ঘরেও থাকতে তবুও তারা অবশ্যই বেরিয়ে আসত নিজেদের অবস্থান থেকে যাদের মৃত্যু লিখে দেয়া হয়েছে। তোমাদের বুকে যা রয়েছে তার পরীক্ষা করা ছিল আল্লাহর ইচ্ছা, আর তোমাদের অন্তরে যা কিছু রয়েছে তা পরিষ্কার করা ছিল তাঁর কাম্য। আল্লাহ মনের গোপন বিষয় জানেন।” (৩ : ১৫৪) সূরা ফাতির ২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ যে রহমতের দরজা মানুষের জন্য খুলে দেন তা রুদ্ধ করার কেউ নেই এবং যা তিনি রুদ্ধ করে দেন তা আল্লাহর পরে আর কেউ খোলার নেই। তিনি পরাক্রমশালী ও জ্ঞানী। যে কোন মৃত্যুর চেয়ে তাই আল্লাহর রাস্তায় জীবন দান অনেক বেশি শ্রেয়। আর আল্লাহর রাস্তায় জীবনের কোরবানি মানে অন্য সব মৃত্যুর ন্যায় কোন মরণ নয়। এটা এক অনন্য সমৃদ্ধ জীবনে প্রবেশের উন্মুক্ত দুয়ার। “আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত। আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তার প্রেক্ষিতে তারা আনন্দ উদযাপন করছে। এ জন্য শহীদরা বারবার আল্লাহর রাস্তায় মরতে চাইবে। বুখারী ও মুসলিমে আনাস (রা:)-এর বর্ণনা করা হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের জানিয়েছেন, “যারা জান্নাতে প্রবেশ করেছে তাদের কেউ আর দুনিয়ায় ফেরত আসতে চাইবে না, আর তার জন্য দুনিয়াতে কিছু নেইও; তবে শহীদ ছাড়া। সে দুনিয়ায় ফেরত আসতে চাইবে এবং শাহাদাতের যে মর্যাদা অবলোকন করবে সে জন্য আল্লাহর রাস্তায় দশবার মরতে চাইবে।” এমনকি রাসূলুল্লাহ (সা) নিজে কামনা করতেন আল্লাহর রাস্তায় শাহাদাত লাভের।
ঘ. আরো যে বিষয়ের কোরবানি জরুরি
১. ভালবাসার কোরবানি ২. পারিবারিক ভালবাসার কোরবানি ৩. বন্ধুত্ব কোরবানি ৪. ব্যক্তিগত মতামত ৫. আবেগ-অনুভূতি ৬. মেজাজ ও রুচি ৭. আত্মমর্যাদাবোধ ইত্যাদি। সামাজিক শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু সমাজ কাঠামো বিনির্মাণের জন্য এসবের কোরবানি করতে হয় তখন যখন এটা পরিস্ফুট হয়ে উঠে যে এগুলোর কোরবানিই হচ্ছে সমাধান।

নিজের জীবনকে বিলীন করার দৃষ্টান্ত
ক. মাওলানা মওদূদী (রহ) : মাওলানা মওদূদী ১৯৫৩ সালের ৮ মের ফাঁসির নির্দেশের পর ‘জীবন-মৃত্যুর ফয়সালা জমিনে নয় আসমানে হয়’Ñ এ কথা স্মরণ করিয়ে তাঁর নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা মনে রাখবেন যে, আমি কোন অপরাধ করিনি। আমি তাদের কাছে কখনো কিছুতেই ভিক্ষা চাইব না।” ‘যে প্রাণ ভরে শাহাদাতের সুধা পান করতে যাচ্ছে সেই কি এমনই নির্বোধ যে আত্মহত্যা করে জাহান্নামে যাবে’। “আমি যদি বসে পড়ি তবে দাঁড়িয়ে থাকবে কে?” (১৯৬৩ সালে লাহোরে নিখিল পাকিস্তান জামায়াতের সম্মেলনে উদ্বেধনী ভাষণে)।
খ. সাইয়েদ কুতুব : ১৯৫৫ সালের ১৩ জুলাই সাইয়েদ কুতুকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড। ১ বছর পর নাসের সরকারের পক্ষ থেকে তাকে প্রস্তাব দেয়া হয় “সংবাদপত্রের মাধ্যমে ক্ষমার আবেদন করলে মুক্তি দেয়া যেতে পারে। জবাবে তিনি বলেন ‘আমি এ প্রস্তাব শুনে আশ্চর্যন্বিত হচ্ছি যে, মজলুমকে জালিমের নিকট ক্ষমার আবেদন করা হচ্ছে। আল্লাহর কসম যদি ক্ষমা প্রার্থনার কয়েকটি শব্দ আমাকে ফাঁসি থেকে রেহাই দিতে পারে তবুও আমি এরূপ শব্দ উচ্চারণ করতে রাজি নই। আমি আল্লাহর নিকট এমনভাবে হাজির হতে চাই যে আমি তার প্রতি এবং তিনি আমার প্রতি সস্তুষ্ট হয়।’ ১৯৬৬ সালে আগস্ট মাসে তিনি ও তার ২ জন সাথীকে সামরিক ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে মৃত্যুদন্ডাদেশ শোনানো হয়। কার্যকর হয় ২৫ আগস্ট।
গ. শহীদ হাসানুল বান্নাহ্ (মিসর) : ১৯০৬ সালে আলেকজান্দ্রিয়া শহরে জন্ম। শৈশবে কোরআনে হাফেজ হন। ১৯২০ সালে মাদ্রাসা শেষ করে টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভর্তি। তারপর ঐ মাদ্রাসাতেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ। ১৯২৮ সালে ইখওয়ান প্রতিষ্ঠা। ১৯৪৮ এর ৮ ডিসেম্বর নিষিদ্ধ বান্নাহ ছাড়া সবাইকে গ্রেফতার করা হয়। তখন তিনি বললেন তাকে বন্দী না করার অর্থ হচ্ছে তার বিরুদ্ধে মৃত্যু পরওয়ানা জারি করা হয়েছে। ১৯৩৯-এর ১২ ফেব্রুয়ারি কায়রোতে ইয়ং ম্যানস অ্যাসোসিয়েশনের অধিবেশনে ভাষনদান শেষে ট্যাক্সিযোগে যাওয়ার সময় তাকে শহীদ করা হয়।
ঘ. শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা : শহীদের মিছিলে এক অগ্রসেনানী শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর, তিনি এই মিছিলে যোগ দেন। সেদিন ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে রক্ত দিয়ে লিখে গেছেন প্রিয় নামটি আবদুল কাদের মোল্লা। আর শাহাদাতের মৃত্যুই শুধু পারে জান্নাতের নিশ্চয়তা দিতে। আমার অনুরোধ, আমার শাহাদাতের পর ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা যেন ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দেয়। আমি ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের উদ্দেশে বলছি, শাহাদাতের রক্তপিচ্ছিল পথ ধরে অবশ্যই ইসলামের বিজয় আসবে। আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যেন ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা আমার রক্তের বদলা নেয়। আল্লাহ যাদের সাহায্য করেন তাদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারে না। ওরা আবদুল কাদের মোল্লাকে হত্যা করে ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে চায়। আমি বিশ্বাস করি, আমার প্রতি ফোঁটা রক্ত ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রাকে তীব্র থেকে তীব্রতর করবে এবং জালেম সরকারের পতন ডেকে আনবে।
(আগামি সংখ্যায় সমাপ্য)
লেখক : কেন্দ্রীয় শিক্ষা সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির

কোরবানির পথের দুটো হাতিয়ার
আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ ও তাঁর রাস্তায় কোরবানিতে অবিচল থাকার জন্য দরকার হয় আল্লাহর সাহায্যের। আর সেই সাহায্য অর্জনের হাতিয়ার হচ্ছে সবর ও সালাত। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “হে ঈমানদাররা, সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য গ্রহণ কর। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সবরকারীদের ভালবাসেন।” (২ : ১৫৩) শত্রুদের মোকাবেলায় ময়দানে অটল থাকার জন্য দরকার প্রচন্ড ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের। তাই আল্লাহ বিরোধীদের মোকাবেলায় সবরের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন। “ওহে যারা ঈমান এনেছ! ধৈর্যধারণ করো আর ধৈর্যধারণে (শত্রুদের চেয়ে) অগ্রণী হও, আর দৃঢ়তা অবলম্বন করো, এবং আল্লাহ্থকে ভয়শ্রদ্ধা করো, যেন তোমরা সফলকাম হতে পারো।” (৩ : ২০০)

যুগে যুগে কোরবানি
কুরআন ও হাদিসের পাতায় পাতায় সোনার হরফে লিপিবদ্ধ রয়েছে অতীতের আম্বিয়া (আলায়হিমুস-সালাম) ও তাদের সঙ্গী-সাথীদের ত্যাগ ও কোরবানির কীর্তিগাথা। আল্লাহ সূরা আলে ইমরানের ১৪৬ নম্বর আয়াতে সংগ্রামে অবিচল নবী ও তাঁর সাথীদের চমৎকার বর্ণনা পেশ করেছেন। “আর আরো কত নবী যুদ্ধ করেছেন, তাঁদের সঙ্গে ছিল প্রভুর অনুগত বহু লোক, আর আল্লাহ্পথে তাদের উপরে যা বর্তেছিল তার জন্য তারা অবসাদগ্রস্ত হয়নি, আর তারা দুর্বলও হয়নি, আর তারা নিজেদের হীনও করেনি। আর আল্লাহ্ ভালোবাসেন ধৈর্যশীলদের। তারা আর কিছুই বলেননি শুধু এ কথা ছাড়াÑ হে আমাদের রব! আমাদের গুনাহগুলো মাফ কর এবং আমাদের আচরণের বাড়াবাড়িগুলোও। আর আমাদের কদমগুলোকে দৃঢ় করে দাও এবং কাফিরদের ওপর আমাদের বিজয় দান কর।”
হজরত ইবরাহিম (আ:) যাঁর মিল্লাতের আমরা অনুসারী, তাঁকে একের পর এক পরীক্ষা করেছেন আল্লাহ। অসংখ্য কোরবানি তিনি দিয়েছেনÑ নিজের দেশ, পরিবার, সন্তান, ইত্যাদি। তারপর আল্লাহ তাঁকে মানবতার জন্য ইমাম নির্ধারিত করেছেন। “আর স্মরণ করো! ইবরাহিমকে তাঁর প্রভু কয়েকটি নির্দেশ দ্বারা পরীক্ষা করলেন, এবং তিনি সেগুলো সম্পাদন করলেন। তিনি বললেন “আমি নিশ্চয়ই তোমাকে মানবজাতির জন্য ইমাম করতে যাচ্ছি।” (২ : ১২৪) আর আমাদের জন্য প্রেরিত রাসূল ও শিক্ষক মুহাম্মদ (সা) এবং তাঁর সাথীদের কোরবানির ইতিহাস আমাদের জানাই আছে। দুনিয়ার ইতিহাসের বর্বরতম আচরণ করা হয়েছে রাসূলুল্লাহর (সা) সাথে, তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে এবং আপন মাতৃভূমি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁর সাথীদের (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) সাথেও কঠিনতম আচরণ করা হয়েছে।
হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বিভিন্ন সময় সাহাবাগণের সাথে আলোচনায় বসতেন, তারা আলোচনা করতেন কাকে কী ধরনের নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে ইসলাম গ্রহণ করার কারণে, এরকম একটি আলোচনায় একবার এক সাহাবী কিছু না বলে শুধু নিজের পিঠের কাপড় সরিয়ে দিলেন, আর তাদেরকে দেখালেন। হযরত উমর (রা) বলেন, আমি কখনো এরকম পিঠ দেখিনি, তোমার কী হয়েছিল? তিনি বলেন, মক্কার মুশরিকেরা আমাকে নির্যাতনের সময় আগুনের মাঝে দীর্ঘক্ষণ ধরে পাথর গরম করতেন, এরপর আমার পিঠের ওপর সেই পাথরগুলো ছেড়ে দেয়া হতো, আমাকে সেই উত্তপ্ত পাথরের ওপর শুইয়ে দেয়া হতো, এতে আমি অনুভব করতাম যে আমার পিঠের মাংস পুড়ে যাচ্ছে আর আমি পোড়া মাংসের ঘ্রাণ পেতাম, আর এ কারণেই আজকে আমার পিঠে তোমরা এই গর্তগুলো দেখতে পাচ্ছ।
নিদারুণ কষ্ট ও মুসিবতে পতিত ছিলেন সাইয়িদুনা খাব্বাব (রা)। তিনি ছিলেন এক মহিলার দাস ও পেশায় কামার। ইসলাম গ্রহণের পর মক্কার মুশরিকরা তাঁর দ্বারা কাজ করিয়ে নিয়ে তাঁকে মূল্য দেয়া থেকে বিরত থাকত। তারা এমনকি তাঁকে জ্বলন্ত অঙ্গারের ওপর শুইয়ে দিয়ে বুকে পাথর চাপা দিয়ে রাখত। আর এ অবস্থায় তাঁর চামড়া, রক্ত, চর্বি ও গোশ্ত গলে গিয়ে আগুন নিভে যেত। এমনকি তাঁর পিঠে এ জন্য অনেক গর্তও হয়ে গিয়েছিল। এই দুর্বিষহ অবস্থায় খাব্বাব (রা) রাসূলুল্লাহর (সা) কাছে এসে বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করেন না, আমাদের জন্য দোয়া করেন না?” রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, “তোমাদের পূর্বে এমন ব্যক্তিরা পার হয়েছেন যাদের মধ্য থেকে কোন এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে এসে একটা গর্তে পুঁতে দেয়া হতো; তারপর করাত এনে তার মাথার উপর রেখে তা চালিয়ে দিয়ে তাকে দ্বিখন্ডিত করে দেয়া হতো; এবং লোহার চিরুনি দিয়ে তার হাড় থেকে তার গোশ্তগুলো ছাড়িয়ে নেয়া হতো। কিন্তু এটাও তাকে তার দীন থেকে ফিরিয়ে দিতে পারত না। আল্লাহর কসম, আল্লাহ অবশ্যই এই দাওআতকে পূর্ণতা দান করবেন। আর একজন সওয়ার সানআ থেকে হাদরামাউত পর্যন্ত ভ্রমণ করবে যাতে তাকে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করতে হবে না এবং কোন দুশ্চিন্তাও করতে হবে না শুধু তার পালিত পশুর ব্যাপারে নেকড়ের ভীতি ছাড়া। (সহীহ আল বুখারী) আর এঁদের পথ ধরেই যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা ত্যাগ ও কোরবানির নমুনা পেশ করেই চলেছেন। আর এই ধারা কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে।

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে আল্লাহ্র সাহায্য ও বিজয় প্রদান
ক. আল্লাহ্ সাহায্য করবেন : আল্লাহ্ তায়ালা বলছেন,“আমি সাহায্য করব রাসূলগণকে ও মুমিনগণকে পার্থিব জীবনে ও সাক্ষীদের দন্ডায়মান হওয়ার দিবসে”। (সূরা গাফির ৫১) আল্লাহ্তায়ালা আরো বলছেন, “মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব (সূরা আর রুম ৪৭) যখন আমরা আমাদের ঈমানকে পরিপূর্ণ করব, আল্লাহ্ আমাদের বিজয় দান করবেন। কিন্তু আমাদের এক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করতে হবে কেননা বিজয় লাভের পূর্বে একজন মুমিনকে অনেক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে।
খ. আল্লাহ মন্দকে মুছে দেবেন : আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, “আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদের মন্দ কাজগুলো মিটিয়ে দেবো এবং তাদেরকে কর্মের উৎকৃষ্টতর প্রতিদান দেব”। (আল আনকাবুত ৭) সাফওয়ান ইব্ন মুহরিয থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : “আল্লাহ তাআলা মুমিনের নিকটবর্তী হবেন এবং বলবেন : মনে পড়ে অমুক পাপ, মনে পড়ে অমুক পাপ? সে বলবে : হ্যাঁ, হে আমার রব, অবশেষে সে যখন তার সকল পাপ স্বীকার করবে এবং নিজেকে মনে করবে যে, সে ধ্বংস হয়ে গেছে, আল্লাহ বলবেন : তোমার ওপর দুনিয়াতে এসব গোপন রেখেছি আজ আমি তা তোমার জন্য ক্ষমা করে দিচ্ছি।” (বুখারী ও মুসলিম)
গ. কোন প্রচেষ্টা বৃথা যাবে না : আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, “যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার নষ্ট করি না।” (সূরা কাহফ ৩০) ধরুন, আপনি কাউকে ইসলামের দিকে আহবান করছেন, কিন্তু কেউ শুনছে না, কিংবা আপনি আপনার দাওয়াহর ফলে কোন পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন না, আপনার সে ক্ষেত্রে জেনে রাখা উচিত, আপনার পুরস্কার আল্লাহর কাছে, আর আল্লাহর কাছে আপনার কোন শ্রম বৃথা যাবে না, আর সংখ্যা দিয়ে সফলতা বিচার করবেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যখন আমাকে ঊর্ধাকাশে ভ্রমণ করানো হয়েছিল- আমি একজন নবীকে দেখলাম যার অনুসারী দশ জন, একজন নবীকে দেখলাম যার অনুসারী পাঁচজন, একজন নবীকে দেখলাম দুইজন অনুসারী নিয়ে দন্ডায়মান, আর কাউকে দেখলাম একজন অনুসারী, আর কোন কোন নবীর একজনও অনুসারী ছিল না।’ কিন্তু এই নবীগণ কেউই তাদের মিশনে ব্যর্থ হননি, বরং লোকেরা নিজেরাই বিশ্বাস করতে অস্বীকার করেছে। বাস্তব কথা হচ্ছে, আমরা যা অর্জনের যোগ্যতা রাখি, আল্লাহ আমাদেরকে তার চেয়েও বেশি দান করে থাকেন।
ঘ. অবিচলতা ও দৃঢ়তা : আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, “আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা মজবুত করেন। পার্থিব জীবনে এবং পরকালে। এবং আল্লাহ জালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা, তা করেন”। (ইবরাহিম ২৭) আল্লাহ আপনাকে অবিচলতা দান করবেন, কারণ জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমাদের ঈমানের পরীক্ষা হবে আর তা ধরে রাখার প্রয়োজন দেখা দেবে। দুনিয়ার ফিতনা আর ফাসাদের মুখে স্থির থাকা সম্ভব নয়, যদি না আল্লাহ আমাদের দৃঢ়পদ রাখেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়শই এই দোয়া করতেন, “হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আপনার দীনের ওপর আমাদের অন্তরগুলোকে স্থিরতা দান করুন।”
ঙ. শান্তি এবং নিরাপত্তা : আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, “যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শেরেকির সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যই শান্তি এবং তারাই পথগামী।” (সূরা আনয়াম : ৮২) একমাত্র আল্লাহই পারেন আমাদের অন্তরে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রদান করতে। এই শান্তি ও নিরাপত্তার অনুভূতি বিভিন্ন রূপে আসতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বদর যুদ্ধের দিনে যখন মাত্র ৩০০ জন মুসলমান ১০০০ সুসজ্জিত কাফিরের মোকাবেলায় দাঁড়িয়ে গেলেন তখন একমাত্র আল্লাহই তাদের অন্তরে সাকিনাহ (প্রশান্তি) দান করলেন, তারা তাদের সংখ্যা দেখে ভীত হলেন না বরং তাদের প্রতি আল্লাহ্ প্রশান্তি নাজিল করলেন, কাফিরদের বিরুদ্ধে তাদের পদ দৃঢ় করলেন।
চ. মুমিনদের প্রশান্তি প্রদান করেন : আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন, “যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমানদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরস্কার দেবো যা তারা করত।” (নাহল ৯৭) “একজন মুমিনের উদাহরণ একটি শস্যের মত, থেকে থেকে বাতাস তাকে দোলায়। তদ্রƒপ একের পর এক মুসিবত অবিরাম অস্থির করে রাখে মুমিনকে। পক্ষান্তরে একজন মুনাফিকের উদাহরণ একটি দেবদারু বৃক্ষের ন্যায়, দোলে না, কাত হয়েও পড়ে না, যতক্ষণ না শিকড় থেকে সমূলে উপড়ে ফেলা হয় তাকে।” (মুসলিম : ৫০২৪) যখন জেলে আটকে রাখা হয়েছিল তখন ইবন তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “যদি এই শাসকেরা জানতো আমার অন্তরে কী সুখ আর শান্তি বিরাজ করছে (এই আটক অবস্থায়ও) তাহলে তারা আসতো, আর তরবারির অগ্র ভাগ দিয়ে হলেও আমার কাছ থেকে তা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতো।
ছ. আল্লাহ তাআলা ভাগ্যে রেখেছেন পৃথিবীর নেতৃত্ব : তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসন কর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসন কর্তৃত্ব দান করেছে তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয় ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরিক করবে না। (সূরা নুর : ৫৫)

ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে পুরস্কার প্রদান
রাসূল (সা) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি সত্যের কালেমা উচ্চারণ এবং মিথ্যা প্রতিরোধের জন্য যুক্তি প্রদর্শন করে এবং নিজের প্রচেষ্টায় হকের সাহায্যের জন্য কাজ করে সেই ব্যক্তির এই কাজ আমার সাথে হিজরত করার চেয়ে বেশি উত্তম বিবেচিত হবে। রাসূল (সা) আরো বলেন, ইসলামের পথে কারো এক ঘণ্টার কষ্ট সহ্য করা এবং দৃঢ়পদ থাকা তার ৪০ বছর এবাদতের চেয়ে উত্তম। হযরত কাতাদা (রা) বলেন, হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) আমাকে বলেছেন যে, রাসূল (সা) বলেছেন, কেয়ামতের দিন দাঁড়িপাল্লা লাগানো হবে, সদকা খয়রাত যারা করবে তাদের দানের বিনিময়ে, পুরস্কার দেয়া হবে। নামায রোযা হজ ইত্যাদি নেক কাজের বিনিময় দেয়া হবে। এরপর আল্লাহর পথে বিপদ সহ্যকারীদের পালা আসবে। তাদের জন্য দাঁড়িপাল্লা লাগানোর আগেই তাদের নেক আমল ওজন হয়ে যাবে। তাদের বেহিসাব বিনিময় দেয়া হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ধৈর্যশীলদের তাদের পারিশ্রমিক বিনা হিসেবে দেয়া হবে। (সূরা জুমার, ১০) দুনিয়ার জীবনে বিপদে-মুসিবতে বিপন্ন অসহায় বান্দারা কেয়ামতের দিন বেহিসাব পুরস্কার পেতে থাকবেন। এই দৃশ্য দেখে দুনিয়ার জীবনে আরাম-আয়েশে বসবাসকারীরা আক্ষেপ করে বলতে থাকবে, আহা দুনিয়ার জীবনে আমার দেহ যদি কাঁচি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করা হতো তবে আজ আমি অনেক বেশি পুরস্কার লাভ করতাম।

মুসলমানদের অভিভাবক হলেন আল্লাহ
প্রকৃত ঈমানদার জীবন দেবে তবুও ঈমানের পথ থেকে ফিরে যাবে না। পাক্কা মুসলমান কখনো মাথা নত করতে জানে না। বাতিলের হুঙ্কার, রক্তচক্ষু ভয় করে না মজবুত ঈমানদারেরা। মুসলমানদের অভিভাবক হলেন আল্লাহ। মুসলমানদের নেতা হলেন নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা)। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর যারা কুফুরি করে, তাগুত (শয়তান) তাদের অভিভাবক। তারা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে বের করে আনে। এরাই হলো জাহান্নামি। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।” (সূরা বাকারা : ২৫৭) সুতরাং আল্লাহ অভিভাবক হলে মুসলামানদের ভয় কিসের? দৈহিক নির্যাতন, মানসিক অস্থিরতা এবং কাতর অবস্থাকে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পানি দিয়ে ঠান্ডা করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে সকল ঈমানদারকে এই বার্তা দিয়ে বোঝাচ্ছেন যে, “লোকেরা কি মনে করেছে যে, ঈমান এনেছি বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে অথচ পরীক্ষা করা হবে না?” বর্তমান সময়ে এ আয়াতের আলোকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় শয়তানের প্ররোচনায় যারা আল্লাহ, কুরআন, নবী (সা)-কে নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলছে তারা নবীর ওয়ারিশ এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকেও বিভিন্নভাবে ভয় দেখাতে চাচ্ছে। ঈমানদারদের কাছে এসব কিছুই না। তারা বিশ্বাস করে এক আল্লাহর ওপর। তবে এ কথা সত্য যে, হামলা মামলা নির্যাতন অপপ্রচার মিথ্যা অভিযোগ হয়রানি থাকবে কারণ এ অবস্থা সৃষ্টি হলেই প্রকৃত মুমিন চেনা যায়। আল্লাহ বলেন, “এ সময় ও অবস্থাটি তোমাদের ওপর এ জন্য আনা হয়েছে যে, আল্লাহ দেখতে চান তোমাদের মধ্যে সাচ্চা মুমিন কে? আর তিনি তোমাদের শহীদ হিসেবে কবুল করতে চান।” (সূরা আলে ইমরান : ১৪১)

জালিমদের শাস্তি দুনিয়া ও
আখেরাতে হয়
পৃথিবীর ইতিহাসে যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মহব্বত ও ভালোবাসায় আত্মত্যাগের মহান সোনালি অধ্যায় রয়েছে তেমনি রাসূলের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করার প্রয়াস চালিয়ে একদল লোকের নির্মম পরিণতির শিক্ষণীয় অধ্যায় আছে। রাসূলের কটূক্তিকারী দুনিয়াতেই সাজা ভোগ করে। রাষ্ট্রীয়ভাবে শায়েস্তা করা না হলে আল্লাহর কুদরতে সে করুণ পরিণতি ভোগ করে। আল্লাহ তায়ালা সূরা আলে ইমরান ২১ নম্বর আয়াতে বলেন, যারা আল্লাহর বিধান ও হিদায়াত মানতে অস্বীকার করে এবং তাঁর নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে আর এমন লোকদের প্রাণ সংহার করে, যারা মানুষের মধ্যে ন্যায়, ইনসাফ ও সততার নির্দেশ দেবার জন্য এগিয়ে আসে, তাদের কঠিন শাস্তির সুসংবাদ দাও। আল্লাহ তায়ালা সূরা আলে ইমরান ২২..নম্বর আয়াতে বলেন, এরা এমন সব লোক যাদের কর্মকান্ড (আমল) দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানেই নষ্ট হয়ে গেছে এবং এদের কোন সাহায্যকারী নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারা নিজেদের শক্তি ও প্রচেষ্টাসমূহ এমন সব কাজে নিয়োজিত করেছে যার ফল দুনিয়াতে যেমন খারাপ তেমনি আখেরাতেও খারাপ। দেড় হাজার বছরের ইতিহাস থেকে কিছু প্রমাণ নিম্নে পেশ করা হলো :
আবু লাহাব : ইসলামের ইতিহাসে আবু লাহাবই প্রথম ব্যক্তি, যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দিয়েছে। বুখারী মুসলিমসহ হাদিসের প্রায় সকল কিতাবেই উল্লেখ রয়েছে- এর ফলে আবু লাহাব নির্মম পরিণতি ভোগ করে। বদর যুদ্ধের সপ্তাহ খানেক পরই সে এক মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। এ রোগটিকে কুরাইশরা খুবই ঘৃণা করত এবং তা সংক্রমণের ভয় করত। ফলে তার সন্তানদেরও কেউ তার কাছে যায়নি। তার মৃত্যুর তিনদিন পর লাশ পচে দুর্গন্ধ বের হলেও কেউ তার কাছে ঘেষতে রাজি হচ্ছিল না। জনৈক ব্যক্তির সহায়তায় দূর থেকে তার লাশে পানি ঢেলে গোসলের কাজ সমাধা করা হয়। এরপর মক্কার দূরবর্তী এক স্থানে নিয়ে তারা তাকে পাথর চাপা দিয়ে দেয়।
আল্লাহতায়ালা অতীতে আবরাহার বাহিনীকে আবাবিল পাখি দিয়ে ধ্বংস করেছেন। ফেরাউন নদীতে ডুবে মরেছে। নমরুদ ক্ষুদ্র মশার কামড়ে নিহত হয়েছে। তিনি বর্তমান জামানার জালিমদেরকেও শায়েস্তা করতে পারেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইতিহাস অধ্যয়ন করলে দেখা যায় যে কোন একটি দেশে কেউ চিরদিন একই অবস্থানে থাকেন না। কেউ কখনও শাসক হয় আবার শাসিত হয়। কখনও জালিম হয় বা মাজলুম হয়। হিটলার তার ক্ষমতার সময় অনেক নির্মম অত্যাচার চালায় কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী হয়ে আছে যে হিটলারের পরিণতিও কত করুণ হয়েছে। হিটলারের শাসনেরও অবসান আছে। ফেরাউন-নমরুদের শাসনেরও শেষ ছিল।
আজ আমাদের অনেকের জীবনে জেল-জুলুম, নির্যাতন, হত্যা, ফাঁসির রায় এগুলো নতুন হলেও ইসলামী আন্দোলনে তা একেবারেই পুরাতন। আজো পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে মুসলমানদের সাথে চলছে একই আচরণ। সময়ের আবর্তনে যেমনি রাতের গভীরতার পর সুবে সাদেকের আলোকরশ্মি দেখা দেয়। অনুরূপভাবে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় জালিমদের পতন ঘটবে। আর মাজলুম মানবতা খুঁজে পাবে ন্যায় ও ইনসাফের সৌধের ওপর প্রতিষ্ঠিত একটি সুন্দর সমাজ। এই জন্য প্রয়োজন ধৈর্য, হিকমাত ও সাহসিকতার সাথে পরিস্থিতির মোকাবেলা করা। হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো, তাঁর দরবারে নৈকট্য লাভের উপায় অনুসন্ধান করো এবং তাঁর পথে প্রচেষ্টা ও সাধনা করো, সম্ভবত তোমরা সফলকাম হতে পারবে। (আল মায়েদাহ : ৩৫) ইসলামী আন্দোলনের ওপর জুলুম নির্যাতন যত বেশি আসবে আন্দোলন তত মজবুত ও শক্তিশালী হবে। সেই বিচারে বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলন সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চূড়ান্ত আলামত এখন লক্ষণীয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর হামলা, মামলা ও খুন, গুম, অপহরণ, হত্যা, সন্ত্রাস, লুটপাটসহ তাদের সকল প্রকার জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে আসছে। এদেশ থেকে ইসলামী আন্দোলনকে নির্মূল করতে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে নেতৃবৃন্দকে হত্যা করার গভীর ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু শহীদেরর রক্ত সিঁড়ি বেয়ে সকল বাধা অতিক্রম করে এদেশে ইসলামী আন্দোলন অনেক জনপ্রিয় ও গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে ইনশাআল্লাহ।

মন্তব্য