চীন দেশে একটি প্রবাদ আছে, ‘তুমি যদি এক বছরের পরিকল্পনা করো তাহলে শস্য রোপণ কর, তুমি যদি দশ বছরের পরিকল্পনা করো তাহলে গাছ লাগাও, আর যদি হাজার বছরের পরিকল্পনা করে থাক তাহলে মানুষ তৈরি কর।’ মানুষকে মানুষ করার আয়োজনই শিক্ষা। মানুষ ছাড়া সকল প্রাণীই প্রকৃতির নিজস্ব আয়োজনে জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় জ্ঞানসমৃদ্ধ হয়, এ জন্য তাদের কৃত্রিমব্যবস্থা করতে হয় না। অথচ মানুষকে জ্ঞানসমৃদ্ধ হওয়ার জন্য একটি পরিকল্পিত কৃত্রিমব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। সেটি হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষার সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা দিয়েছেন মহাকবি মিল্টন। তাঁর মতে, ‘Education is the harmonious development of body, mind and soul’ অর্থাৎ শিক্ষা হলো দেহ, মন ও আত্মার সমন্বিত উন্নতি সাধন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথও মিল্টনের কথার প্রতিধ্বনি করেছেন, ‘মানুষের অভ্যন্তরের মানুষটিকে পরিচর্যা করে খাঁটি মানুষ বানানোর প্রচেষ্টাই শিক্ষা।’ সক্রেটিস কিংবা তাঁর শিষ্য প্লেটোর মতে, ‘নিজেকে জানার নামই শিক্ষা।’ সুতরাং কোনও জাতির সন্তানদের সে জাতির উপযোগী যোগ্য, দক্ষ, সার্থক ও কল্যাণকামী সদস্য হিসেবে গড়ে তোলার নামই শিক্ষা। স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যেক জাতির শিক্ষাব্যবস্থা এক হবে না। কারণ প্রতিটি জাতির প্রয়োজনও এক নয়, সংস্কৃতিও এক নয়, আধ্যাত্মিক চিন্তাও এক নয়, সামাজিক রীতিনীতি ও লোকাচার এক নয়, বরং তা ভিন্ন ভিন্ন। শিক্ষা একটি সামগ্রিক বিষয়।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে কোনও জাতি সামনের দিকে এগিয়ে চলে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তখন সে দল নিজেদের মতো করে ইতিহাস ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করে। এভাবে নতুন প্রজন্ম সত্য অতীত থেকে হয় বঞ্চিত। বিকৃত ইতিহাস জাতিকে বিভাজন ও অনৈক্যের দিকে ঠেলে দেয়। স্বাধীনতার ৪৪ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও আমরা আমাদের জাতিসত্তার পরিচিতির ব্যাপারে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছতে পারিনি। শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে একটা গল্প আছে, আমাদের দেশে নাকি ইংরেজ আমলে চাকরি বা পদোন্নতির জন্য কিছু প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হতো। কাউকে চাকরিতে নিয়োগ করা হলে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন করা হতো এবং তার উত্তর ধারাবাহিকভাবে শিখিয়ে দেয়া হতো। যেমন প্রথম প্রশ্ন হলো, What is your age? অর্থাৎ বলা হয় তোমার বয়স কতো? তাকে শিখিয়ে দেয়া হয় 30 Years । তারপর দ্বিতীয় প্রশ্ন করা হয় How long are you service? অর্থাৎ তোমার চাকরির বয়স কতো? তখন উত্তর শিখিয়ে দেয়া হতো 2 Years। তৃতীয় প্রশ্ন করা হয় What do you expect promotion and increament of your salary? অর্থাৎ তুমি কি বেতন বৃদ্ধি চাও নাকি পদোন্নতি চাও? তখন উত্তর শিখিয়ে দেয়া হয় Both. ধারাবাহিকভাবে তিনটি প্রশ্নের উত্তর শিখিয়ে দেয়ার পর কখনো লর্ড দ্বিতীয় প্রশ্ন আগে জিজ্ঞাসা করলে একজন উত্তর দেয় 30 Years. তখন প্রথম প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেয় 2 Years. উত্তর শুনে লর্ড অবাক হয়ে বলেন, এটা কি করে সম্ভব? তখন লর্ড তৃতীয় প্রশ্ন করেন Are you nonsence you or I? অর্থাৎ তুমি পাগল না আমি পাগল ? তখন উত্তরে সে বলে Both.
ঠিক তেমনই আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কতিপয় বিষয় মুখস্থ করানো হয়। শিক্ষক কি বলেন ছাত্র তা বুঝে না। মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের দরুন প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা একদল ভোগবাদী, স্বার্থপূজারি ও অবিবেচক লোক ছাড়া বিকল্প কিছু উপহার দিতে পারছে না। শিক্ষার উদ্দেশ্যে ‘প্রবেশ কর, সেবার উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়’ শিক্ষাঙ্গনের ফলকে এটা লিখে রাখলেও বাস্তবে এর কোনও ফল নেই। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য সমাজের মৌলিক রূপান্তর এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতি সাধন করা। রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য শিক্ষা খাতে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নের পরিমাণ বাড়ানো উচিত এবং তা যত দ্রুত সম্ভব। শিক্ষা খাতে রাষ্ট্র স্ব-উদ্যোগে বিনিয়োগে আগ্রহী হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় রাষ্ট্রই। যে কোন রাষ্ট্র বা জাতির উন্নতি ও উন্নয়নের বড় সোপান হলো শিক্ষা। এ জন্য শিক্ষাকে বলা হয়েছে জাতির গৌরব। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- ‘নলেজ ইজ পাওয়ার’, অর্থাৎ জ্ঞানই শক্তি। জ্ঞান অর্জন করার জন্য প্রয়োজন হয় শিক্ষার। এ দিক থেকে শিক্ষা এক অর্থে শক্তি। আজকের প্রযুক্তিশাসিত বিশ্বে বা ডিজিটাল যুগে শিক্ষা যতটা না কিতাবের মধ্যে আবদ্ধ তার চেয়েও বেশি রয়েছে ব্যবহারিক দিকে। এমতাবস্থায় শিক্ষার মানোন্নয়ন খুবই জরুরি হয়ে উঠেছে। শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য প্রয়োজন অর্থ। তাই, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাতীয় বাজেটে মোট বাজেটের একটি বড় অংশ বরাদ্দ করা হয় শিক্ষা খাতের জন্য। দুর্ভাগ্যের বিষয়, আমাদের দেশে জাতীয় বাজেটের একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ বরাদ্দ করা হয় এবং বছর বছর এই বরাদ্দ ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে। অথচ মানোন্নয়ন ও শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান বৈষম্য দূর করতে হলে বরাদ্দ বাড়ানো অত্যাবশ্যক। নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন বাংলাদেশে এসে অনেক কথাই বলেছিলেন। সেই সব গুরুত্বপূর্ণ কথা বা অভিমত ছিল প্রধানত শিক্ষা এবং শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। তিনি জাপানের উচ্চপর্যায়ের এক নেতার সঙ্গে তার এক সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছিলেন। খুব অল্প সময়ে জাপানের উন্নতির পেছনে অনুঘটক কী সেটা জানতে চাওয়ায় জাপানি ওই নেতা বলেছিলেন, ‘তেমন কিছু নয়, বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকার পর থেকে আমরা কেবলমাত্র শিক্ষা খাতের বাজেট দ্বিগুণ করে দিয়েছি!’ পুরো ব্যাপারটি হয়তো এই সামান্য একটি বাক্যে বোঝা যাবে না। হয়তো এর ভেতর আরো অনেক উপসর্গ এবং অনুসর্গ রয়েছে। কিন্তু মোটা দাগে শিক্ষা বাজেট বৃদ্ধির কথাটা অমর্ত্য সেন মনে রেখেছিলেন এবং সেটা বাংলাদেশে এসে বলেও ছিলেন।
‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’- এই বাক্যটি কে পড়েননি? কে জানেন না? হ্যাঁ, বাক্যটি সবাই পড়েছেন এবং সবাই জানেনও। সেই তারাও জানেন যারা বাজেট প্রস্তুত করেন। যারা খাতওয়ারি বাজেটের বরাদ্দ নির্ণয় করেন।
এবারকার বাজেট ছিল সর্বতোভাবে এ দেশের সর্ববৃহৎ এক রেকর্ড সৃষ্টিকারী বাজেট। সেই ২ লাখ ৯৫ হাজার ১ শ’ কোটি টাকার বাজেটে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের মোট বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় বেশি হলেও পারসেন্টেজের তুলনায় তা গত বছরের চেয়ে কম। গত বছর এ দুই মন্ত্রণালয় মিলে বাজেটের ১১ ভাগ বরাদ্দ দেয়া হলেও এবার দেয়া হয়েছে ১০ দশমিক ৭ ভাগ!
শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমেছে। মাত্র ২ দশমিক ২ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার ও বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে কেবলমাত্র বাংলাদেশেই শিক্ষা খাতে ব্যয় সবচেয়ে কম। ভারতে শিক্ষা খাতে ৪ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করে, শ্রীলঙ্কা করে ৬ শতাংশ। বাংলাদেশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে বলে আসছে শিক্ষা খাতে ব্যয় ৬ শতাংশে উন্নীত করবে। কিন্তু বাড়ানো তো দূরের কথা বরং কমাচ্ছে। জাতির উন্নতি ও উন্নয়নের জন্য সর্বাধিক প্রয়োজনীয় যে খাত, সে খাতে অর্থ বরাদ্দ কমানো হলে শিক্ষার মানোন্নয়ন করা অসম্ভব।
দুর্ভাগ্যের বিষয় যে কেবল ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে নয়, মোট বাজেটের আনুপাতিক হারে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের হার প্রতি বছরেই কমছে। গত অর্থবছরে ছিল দুই লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। এ দিকে, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ক্ষেত্রে আগে থেকেই ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে মূসক প্রযোজ্য থাকলেও এবার প্রথমবারের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওপর ১০ শতাংশ হারে মূসক নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। পরে বিভিন্ন সমালোচনা ও আন্দোলনের মুখে ৭.৫ শতাংশ হারে মূসক ধরে প্রস্তাব পাস করা হয়, যা বিশ্বের ইতিহাসে শিক্ষা খাতে এক কলঙ্কজনক ও কালো অধ্যায় রচিত হয়েছে। এভাবে শিক্ষার ব্যয় বাড়ানো দেশ ও জাতিকে মেরুদন্ডহীন করার পাঁয়তারা। কারণ এই বাড়তি অর্থটাতো অভিভাবকদের পকেট থেকেই যাবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দেবে না। তারা তাদের চার্জ তো বাড়াবেই।
তা ছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষার মানোন্নয়ন ও বৈষম্য তা নিয়েও শিক্ষাবিদেরা সংশয় প্রকাশ করেছেন। এটা স্বীকার করতে হবে যে বাংলাদেশের শিক্ষা এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হয়নি বলে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়। শিক্ষার ক্ষেত্রে মানের প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর একটি বিষয় হচ্ছে বৈষম্য। কিন্তু বরাদ্দের সিংহভাগই শিক্ষকদের বেতনভাতা ও অবকাঠামো নির্মাণের পেছনে। শিক্ষার মানোন্নয়ন করতে হলে সর্বাগ্রে দরকার ভালো শিক্ষক ও শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ। এ জন্য প্রয়োজন অর্থের। শিক্ষা খাতে যদি পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকে তাহলে এই অর্থ আসবে কোথা থেকে। এ ব্যাপারে শিক্ষাবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, ‘অপর্যাপ্ত বরাদ্দের কারণেই শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার যে বৈষম্য তা দূরীকরণে সরকার ভালো ভূমিকা রাখতে পারছে না।’
আমাদের দেশে শিক্ষার মান, বিশেষ করে মাধ্যমিক পর্যায়ের মানটা খুবই নাজুক। উচ্চতর পর্যায়েও মান সন্তোষজনক বলা যাবে না। এটা না বাড়ালে বিদেশে বাংলাদেশের মান-সম্মানও বাড়বে না। এ ছাড়া শিক্ষার ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের মধ্যেও একটা দৃশ্যমান বৈষম্য বিদ্যমান। এটা দূর করা না গেলে সার্বিকভাবে শিক্ষার মান বাড়ানো যাবে না। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ফলাফলেও এটা বেশ স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়।
প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা যদি জাতির মেরুদন্ড বলে আমরা স্বীকার করি তাহলে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতেই হবে। আর, মেরুদন্ড শক্ত করতে হলে শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো চিহ্নিত করে সেই খাতগুলোকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে হবে। এসব যদি করা না হয় তা হলে জাতির মেরুদন্ড সোজা রাখা সম্ভব হবে না। তাই আমাদের প্রত্যাশা, সরকার আগামী অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে কুণ্ঠিত হবে না।
উচ্চশিক্ষা খাতে অর্থায়নের বিষয়টি আরো ঝামেলাপূর্ণ ও অপর্যাপ্ত। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রণীত ২০০৬-২০২৬ পর্যন্ত বিশ বছরব্যাপী উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যে Strategic Plan রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার যে ৫টি সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরা হয়েছে তার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে অপর্যাপ্ত অর্থসংস্থান! শিক্ষা খাতের সমগ্র ব্যয়ের মাত্র ১১% উচ্চশিক্ষা অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় খাতে সরকার ব্যয় করে প্রতি বছর, যা জিডিপি’র মাত্র ০.১২%। মঞ্জুরি কমিশনের রিপোর্টে এই উভয়ানুপাতকে ন্যূনপক্ষে দ্বিগুণ থেকে আড়াই গুণ বৃদ্ধি করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তাদের হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার গুণগত মান যথাযথ পর্যায়ে নিতে হলে তার মাত্রা হওয়া উচিত অন্তত জিডিপি’র ০.৩০%। সেই হিসেবে ২০১০ সালে উচ্চশিক্ষা খাতে ব্যয়ের প্রয়োজন হতো ২২৪৬ কোটি টাকা (জিডিপি’র ০.৩%), কিন্তু বাস্তবে ব্যয় হয়েছিলো মাত্র ৮৯৮ কোটি টাকা। স্বভাবতই এই ব্যয়ে উপযুক্ত মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ সম্ভব হয় না, উপযুক্ত অবকাঠামো, ছাত্রাবাস ও যাতায়াত সুবিধা গড়ে তোলা সম্ভব হয় না, সম্ভব হয় না পর্যাপ্ত ওঈঞ ব্যবস্থার আয়োজন করা।
উচ্চশিক্ষার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গবেষণাকার্যক্রম, যা হ্রাস পেয়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হলেও বাড়ানো হয়নি গবেষণা খাতে বরাদ্দ। ২০১০ সালের ২৬ জুন প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘মৌলিক গবেষণাশূন্য ১৫ গবেষণাকেন্দ্র’। গবেষণাকেন্দ্রগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, ১৫টি গবেষণাকেন্দ্রের জন্য এক শিক্ষাবর্ষে বরাদ্দ ছিল সাড়ে ২৪ লাখ টাকা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ১৫টি গবেষণাকেন্দ্রের মানসম্পন্ন গবেষণার জন্য এক বছরে সাড়ে ২৪ লাখ টাকা কি পর্যাপ্ত? গবেষণা খাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রাপ্ত বরাদ্দ ও ব্যয়ের ব্যাপারে দু-একটি উদাহরণ এখানে প্রাসঙ্গিক হবে। জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় (Washington University in St. Louis) ২০০৬ অর্থনৈতিক বর্ষে গবেষণা করার জন্য ফেডারেল রিসার্চ ফান্ড থেকে ৪৩৪ মিলিয়ন ডলার লাভ করে। সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বার্ষিক বরাদ্দ (Endowment) হচ্ছে ১৪৪ কোটি সিঙ্গাপুরি ডলার (তথ্যসূত্র : সাপ্তাহিক একতা, ২৫ জুন, ২০১১)। এর মানে এই না যে যুক্তরাষ্ট্র বা সিঙ্গাপুরের মতো ধনী দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরূপ বরাদ্দ বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এখনি দিতে হবে, কিন্তু গবেষণার ন্যূনতম বরাদ্দটুকুও যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবস্থা করার উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একদিকে যেমন তার মান হারাবে, অপর দিকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তার মূল কাজটিও স্থবির হয়ে পড়বে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পিএইচডি শিক্ষার্থীকে মাসে ১২ হাজার রুপি করে বৃত্তি দেওয়া হয়। সঙ্গে থাকে গবেষণা করার জন্য আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু বাংলাদেশে এ বিষয়ে যথেষ্ট উদাসীনতা লক্ষণীয়।
প্রস্তাবিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য শিক্ষা খাতে মোট ৩১ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অন্তর্ভুক্ত। বাজেটে মোট ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা, আর আয় দেখানো হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। ঘাটতি ৮০ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটের উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন খাতে মোট বাজেটের ১১.৬ শতাংশ শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এটি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের চেয়ে ১.৫ শতাংশ কমেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১৩.১ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে যে বরাদ্দ ছিল (২৯ হাজার ২১৩ কোটি টাকা) তা সংশোধিত বাজেটের পরিমাণ কমিয়ে ২৮ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা করা হয়। শিক্ষা খাতে এ ব্যয় বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেক। নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষিত বেকার তৈরি করছি কিনা, এটি নিয়ে খোদ দেশ ও বিদেশে প্রশ্ন রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিতদের (ইকোনমিস্ট) মাঝে ৪৭ ভাগ বেকার। একমাত্র আফগানিস্তান বাদে দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার বেশি। শ্রীলঙ্কায় যেখানে এ হার মাত্র ৭ ভাগ, নেপালে ২০, পাকিস্তানে ২৮, আর ভারতে ৩৩, সেখানে বাংলাদেশে এ হার ৪৭। এটি নিঃসন্দেহে একটি উদ্বেগজনক বিষয়। যেখানে প্রতি বছর ১৩ থেকে ১৬ লাখ জনশক্তি চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে, সেখানে বিভিন্ন কারণে (রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অন্যতম) এ দেশে বিনিয়োগ কম হচ্ছে। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে বেকারত্ব। এ বেকারত্বের মাঝে আবার আছে কিছু ‘ছায়া বেকারত্ব’। এদের দেখা যায় না বটে। কিংবা কোনো পরিসংখ্যানেও এরা আসে না। কিন্তু ছোটখাটো, অর্ধবেলা কাজ করে এরা জীবিকা নির্বাহ করছে।
দেশে ৩৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৮৯টি। সব মিলিয়ে ১২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় এদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু ক’টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মানসম্মত দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি হচ্ছে? এর জবাব অত্যন্ত হতাশাজনক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এখন অনেকটা সার্টিফিকেটসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষাব্যবস্থার একটি অন্যতম ক্ষেত্র হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ১০ থেকে ১৫ লাখ ছাত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় পড়াশোনা করে। কিন্তু এখানে কি আদৌ পড়াশোনা হয়? শত শত কলেজে অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। ঢাকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা কিংবা ইউজিসির কর্তাব্যক্তিরা জানেন না এ অনার্স কোর্স খুলে শত শত শিক্ষকের জন্য একটি ‘ব্যবসার’ সুযোগ করে দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক কলেজে আদৌ কোনো ক্লাস হয় না। শিক্ষকরা কলেজে শিক্ষা দানের পরিবর্তে বাসায় ব্যাচের পর ব্যাচ ‘প্রাইভেট’ পড়ান। অনার্স পর্যায়ে কোনো ছাত্র প্রাইভেট পড়ে অথবা শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন, এটিই হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন সরকারি কলেজগুলোর একটি বাস্তব চিত্র। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আসেন, ভিসি যান। কিন্তু সংস্কার কেউ করেন না। এটি এখন মূলত একটি সার্টিফিকেট বিতরণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ভর্তি হয়ে চার বছর পর মেলে একখানা সার্টিফিকেট। ক্লাস না করে, সংসার ধর্ম পালন করে; কোনো টেক্সট বই না পড়েও যে একখানা অনার্স সার্টিফিকেট পাওয়া যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর বড় উদাহরণ। এ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ই দেশে উচ্চশিক্ষায় বড় অংশের বেকারত্ব সৃষ্টি করছে। দুঃখ লাগে, শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি এদিকে পড়েনি।
কিছুদিন আগে বিদেশি পত্রপত্রিকায় বিশ্বের ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে মূল্যায়ন নির্ণয় করা হয়েছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ওই ১০০টির তালিকাতে নেই! এটা কেবলমাত্র বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো বাঙালি জাতির জন্য লজ্জাজনক! জানি না সেই লজ্জা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে স্পর্শ করে কিনা?
কেবলমাত্র শিক্ষার বাজেট নিয়ে এই দশা। এবার যদি তত্ত্ব-তালাশ করে শিক্ষার মান নিয়ে, কারিকুলাম নিয়ে অনুসন্ধান করা যায় তাহলে কী মিলবে? যা মিলবে তা এই পরিসরে তোলা হচ্ছে না। সেটা আর যা-ই হোক ডিজিটাল করণ বা সুখদায়ক কিছু নয়। এমনকি সত্তর দশকে বা তার পর পর সামরিক আমলেও শিক্ষার যে মান বজায় ছিল আজ গণতান্ত্রিক পরিবেশেও সেটুকু ধরে রাখা যায়নি। এটা জোর করে হয়তো অস্বীকার করা যাবে কিন্তু তাতে করে সত্যটা হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে না। শিক্ষা যে কত দ্রুত জাতিকে, দেশকে উন্নত করতে পারে তা শুধুমাত্র জাপানকে দেখে নয়, আমাদের একেবারে পাশের দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কাকে দেখেও শেখা যেত। বাইশ বছরের রক্ষক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের পরও তারা তাদের উন্নতির রেখাচিত্র ঊর্ধ্বমুখী ধরে রাখতে পেরেছে। আর আমরা এখনো সেই আদ্দিকালের ‘সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন’ করতে পারাকেই শিক্ষিত হওয়া মনে করে কল্পিত আনন্দে বগল বাজাচ্ছি! অদ্ভুতভাবে পরীক্ষা পাসের হার নিয়ে গর্বে বুক ফুলিয়ে পত্রপত্রিকার পাতাগুলো আলোকিত করছি।
শিক্ষাব্যবস্থার শুরুতেই প্রাথমিক শিক্ষা, যা অবহেলিত, উপেক্ষিত। সরকারি পৃষ্ঠপোষতায় বা ব্যবস্থাপনায় যে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। উন্নত বিশ্বে প্রতিটি শিশুকে আনন্দের সঙ্গে শিক্ষালাভের সুযোগ করে দেয়া হয়। মেধা ও প্রতিভার বিকাশের জন্য সুন্দর পরিবেশ, আকর্ষণীয় আধুনিক দালান, খেলাধুলার সামগ্রীসহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। আর আমাদের দেশের বেলায় তার ঠিক উল্টো। যেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো দেখে মনে হবে শতবছরের সাক্ষী গোপাল। মনোরম পরিবেশ দূরের কথা, কোথাও খোলা আকাশই যেন তাদের পাঠশালার ছাদ, কোথাও আবার ছাদ থাকলেও পার্শ্ববর্তী প্রাকৃতিক বনরাজি পাঠশালার বেড়া হিসেবে কাজ করে। সেকেলে আমলের একটি চেয়ার-টেবিল, একজন বৃদ্ধ শিক্ষক, তৈলাক্ত একটি ব্ল্যাকবোর্ড এই নিয়ে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ ধরনের পাঠশালা নিয়ে অনেকবার সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে খবরের কাগজগুলোতে। পক্ষান্তরে যে সীমিত সম্পদ আছে তার তুলনায় কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা রমরমা। তারপরও এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসনসঙ্কট। এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে পারা লটারি জেতার মতোই আনন্দদায়ক। লাখ, দু’লাখ ডোনেশন দিয়ে ছেলেমেয়েদের ভর্তি-নজির অগণিত। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার আরেক প্রধান অসুখ হচ্ছে সন্ত্রাস এবং তজ্জনিত উপসর্গ। রাজনৈতিক দলগুলোর ছাত্রসংগঠনগুলোর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা ও অগণতান্ত্রিক মনোভাব থেকেই এর উদ্ভব। ছাত্রসংগঠনগুলোর দু-একটি বাদে বাকি সবাই ছাত্রদের অধিকারভিত্তিক আন্দোলনের পরিবর্তে অন্য কর্মসূচি বাস্তবায়নেই বেশি ব্যস্ত থাকে। এখন ক’বছর যাবৎ সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চাঁদাবাজি, টেন্ডার, ছিনতাই। রসিকজনেরা বলেন, ছাত্ররাজনীতি এখন একটা পেশা এবং ছাত্রনেতাদের লাখপতি কোটিপতি হবার রাস্তাও বটে। সন্ত্রাসের সরাসরি ফসল হচ্ছে সেশনজট। যার ভুক্তভোগীদের উদাহরণ অগণিত। সময় ও অর্থের কি বিপুল অপচয়!
শিক্ষাক্ষেত্রে শতাব্দীর সঞ্চয় হিসাব করতে গেলে হিসাবের খাতায় বড়ই গন্ডগোল লেগে যায়। ক্রেডিটের খাতা বড়ই অসহায়। ১৮৯৩ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত অর্থাৎ বাংলা ১৩০০ সাল থেকে ১৪২১ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ একশত একুশ বছরে আমাদের দেশ দুইবার মানচিত্র ও পতাকা পরিবর্তন করেছে। কিন্তু এ পরিবর্তনে উন্নতির পথে পরিকল্পিতভাবে শিক্ষার অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনাগত যে পরিবর্তন অত্যাবশ্যক ছিল তার সন্ধান ইতিহাসে পাওয়া যায় না। দুর্ভাগা এই জাতি শিক্ষার ব্যাপারে প্রতারিত হয়েছে, আশাহত হয়েছে অনেক।
তাই প্রসঙ্গ শেষ করার আগে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই বস্তুবাদী সভ্যতার অন্যতম দার্শনিক ‘স্ট্যানলি হল’ এর সেই বিখ্যাত উক্তিটি, ‘ÔIf you teach your children three R Reading, Writing & Arithmetic and if you leave the fourth R Religion, then you will get fifth R Raskility. অর্থাৎ যদি আপনি আপনার শিশুকে তিনটি ‘আর’ যথাক্রমে পড়া, লেখা ও অঙ্ক শিক্ষা দেন আর চতুর্থ ‘আর’ রিলিজিওন বা নৈতিকতাকে বাদ দেন তাহলে আপনি পঞ্চম আরেকটি ‘আর’ পাবেন রাসকেলিটি অর্থাৎ উচ্ছৃঙ্খলতা।’
পরিশেষে বলবো, শিক্ষা খাতে রাষ্ট্রীয়ভাবে পর্যাপ্ত অর্থায়ন সময়ের দাবি। এর সাথে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রগতির ধারাটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেখা গিয়েছে যে, দীর্ঘ অর্থনৈতিক মন্দা এবং শিক্ষার ক্রমাগত বেসরকারীকরণের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা খাতে বরাদ্দ গত কয়েক বছরে বেশ কমেছে। এখন শিক্ষা খাতে তাদের বরাদ্দ জিডিপি’র ৫.৭%। যুক্তরাজ্যেও একই কারণে এই বরাদ্দের পরিমাণ বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে জিডিপি’র ৫.৩%। তারপরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর উচ্চশিক্ষা খাতে যে অর্থ বরাদ্দ করে তা বাংলাদেশের প্রায় ৫০ গুণেরও অধিক!। অতএব, এই ধরনের সমস্যা হতে উত্তরণের জন্য এবং জাতীয়ভাবে টেকসই উন্নয়নের ধারাকে নিশ্চিত করার জন্য সরকারের উচিত হবে শিক্ষা খাতে রাষ্ট্রীয়ভাবে পর্যাপ্ত অর্থায়নের বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নেলসন মেন্ডেলার একটি উক্তি ‘ÔEducation is the most powerful weapon which you can use to change the world.’ অর্থাৎ শিক্ষা সবচেয়ে শক্তিশালী একটি অস্ত্র, যা তুমি বিশ্বের পরিবর্তনে ব্যবহার করতে পার।
মন্তব্য