গত অগাস্ট মাসে একটা আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ গ্রহণের জন্য মালয়েশিয়াতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। সেমিনারের নাম ছিল 2nd International Conference on Management from an Islamic perspective (ICMIP-2 2014). আয়োজন করেছিল International Islamic University Malaysia (IIUM) সেমিনারের সময় ছিল অগাষ্ট মাসের ১৯ ও ২০ তারিখ। সেখানে আমি দুইটি Article উপস্থাপন করেছিলাম। Article দুইটি হল “LEADERSHIP PATTERN : A COMPARATIVE STUDY BETWEEN CONVENTIONAL AND ISLAMIC PERSPECTIVE” “IMPACT OF LEADERSHIP; EFFICACIES, AND INNOVATIONS ON PRODUCTIVITY” বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত প্রফেসররা সেখানে অংশগ্রহন করেছিল। যারা অংশ গ্রহণ করেছে সবাই ছিল বড় বড় ইউনিভার্সিটির প্রফেসর, আমি একমাত্র ছাত্র হিসেবে অংশগ্রহণ করছিলাম। প্রথমে একটু ভয় ভয় লাগছিল, কারণ বড় বড় স্যারদের সাথে কিভাবে আর্টিকেল উপস্থাপন করব। সেখানে বিভিন্ন দেশের লোকজনের সাথে দেখা হয়েছিল, তাদের চিন্তা, কথা, আচরণ , উদারতা খুবই ভাল লেগেছিল। মালয়েশিয়াতে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থান ও কয়েকটি ইউনির্ভাসিাটতে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের অনেক ডাক্তার, শিক্ষক ও ছাত্রদের সাথে দেখা হয়েছে, তাদের সাথে উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে অনেক কথা বলার সুযোগ হয়েছে । তাদের সাথে পরামর্শ করে উচ্চশিক্ষার জন্য যারা যাবে তাদের জন্য লেখার আগ্রহ প্রকাশ করলাম ।
মালয়েশিয়া দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার একটি দেশ। যার মোট আয়তন ৩,২৯,৮৪৫ বর্গ কি.মি.। দেশটির রাজধানী শহর কুয়ালালামপুর এবং পুত্রজায়া হল ফেডারেল সরকারের রাজধানী। দক্ষিণ চীন সাগর দ্বারা দেশটি দুই ভাগে বিভক্ত, পেনিনসুলার মালয়েশিয়া এবং পূর্ব মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ার স্থল সীমান্তে রয়েছ থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রুনাই, এর সমুদ্র সীমান্তে রয়েছে সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন এর সাথে। মালয়েশিয়ার মোট জনসংখ্যা ২৮ মিলিয়নের অধিক। পুরো নাম- ফেডারেল অব মালয়েশিয়া। ভাষা- বাহাসা, মেলুয়া (অফিসিয়াল), ইংরেজি, চাইনিজ ইত্যাদি। মুসলমান ৬০%, বৌদ্ধ ১৯%, খ্রিস্টান ৯%, হিন্দু ৬%, কুনফশীয়া ও তাওবাদী ৩%, অন্যান্য ৩%। আয়তন- ৩,২৯,৭৫০ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা- ২৪,৮২১,২৮৬। রাজধানী কুয়ালালামপুর। প্রধান শহর কুয়ালালামপুর ও কুচিং। সাক্ষরতার হারঃ ৮৯%। মাথাপিছু আয় ১০,৪০০ ডলার। মুদ্রা রিংগিতি (১ রিংগিতি = ২৫.৮৪২৩ টাকা)। বাংলাদেশের সাথে সময়ের পার্থক্য +২ ঘণ্টা। আন্তর্জাতিক ডায়ালিং কোড ০০৬০।
শিক্ষাব্যবস্থা : এশিয়ার অন্যতম সমৃদ্ধশালী দেশ মালয়েশিয়া। দেশটি ইতোমধ্যেই ইলেকট্রনিক্স, গাড়ি ও অন্যান্য শিল্পে বিশ্ববাজারে স্থান করে নিয়েছে। গত বিশ বছরে মালয়েশিয়ায় যেমন অনেক উন্নত হয়ে এশিয়ার প্রথম সারির শিল্পোন্নত দেশে পরিণত হয়েছে, তেমনি এর সমান্তরালে এদেশের শিক্ষাব্যবস্থারও ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষার মান এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সারা বিশ্বে শুধু গৃহীতই হচ্ছে না, প্রশংসিতও হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়ায় পড়াশোনার জন্য আসতে শুরু করেছে। এখন মালয়েশিয়ায়া প্রায় ১৫০টি দেশের ৩৬,০০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। উচ্চশিক্ষার জন্য এখানে আছে ১৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ২১টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৬৭টি ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এছাড়াও রয়েছে ৭০৬টি প্রাইভেট ইনস্টিটিউট। এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়াগুলোতে যে সমস্ত শিক্ষক অধ্যাপনা করছেন তাদের অধিকাংশই ইংল্যান্ড, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ ইউরোপের উন্নত দেশ হতে ন্যূনতম ব্যাচেলর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। শিক্ষকতায় তাদের রয়েছে বহু বছরের অভিজ্ঞতা। তাছাড়া এদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ অত্যন্ত সস্থির হওয়ায় এখানে যখন-তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা হয়া না। বর্তমানে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশী মায়েশিয়ায়া উচ্চশিক্ষা গ্রহণে পাড়ি জমাচ্ছে। এখান থেকে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে সহজেই ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ অন্যান্য উন্নত দেশে যাওয়া যায়।
উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা : মালয়েশিয়া বর্তমানে শুধুমাত্র এশিয়ার মধ্যেই নয়া, বরং সারাবিশ্বে একটি উন্নত দেশ হিসাবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি সর্বক্ষেত্রে মালয়োশিয়াা পৃথিবীর বুকে একটি মডেল হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। আর তাই বিশ্ববাসীর নজর এখন এশিয়ার এই দেশটির দিকে।
মালয়োশিয়ায় উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা ৪টি পর্যায়ে বিন্যস্ত-
ডিপ্লোমা কোর্স- ২ থেকে ৩ বৎসর মেয়াাদী
আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্স- ৩ থেকে ৫ বৎসর মেয়াাদী
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স- ১ থেকে ২ বৎসর মেয়াাদী
ডক্টরেট (PhD) কোর্স- ৩-৫ বৎসর মেয়াাদী
এখানকার উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা সেমিষ্টার ভিত্তিক। প্রতি শিক্ষা বর্ষ ৩টি সেমিষ্টারে বিভক্ত। যথা:
১ম সেমিষ্টার : জানুয়াারী-এপ্রিল
২য়া সেমিষ্টার: মে-আগষ্ট
৩য়া সেমিষ্টার: সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর
ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা
আন্ডার গ্র্যাজুয়েট কোর্সের জন্য ন্যূনতম ১২ বৎসরের পূর্বতন শিক্ষা অর্থাৎ উচ্চ মাধ্যমিক সমমানের শিক্ষা
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের জন্য ন্যূনতম ১৬ বৎসরের পূর্বতন শিক্ষা অর্থাৎ ব্যাচেলর ডিগ্রীধারী
ডিেেপ্লামা কোর্সের জন্য নূনতম উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট
ডক্টরেট (PhD) কোর্সের জন্য পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী এবং ব্যাপক গর্বেষণালব্ধ অভিজ্ঞতা।
ভাষাগত যোগ্যতা : মালয়োশিয়ায় আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পড়াশুনার জন্য বিদেশী শিক্ষার্থীদের ইংরেজী ভাষার নিম্নোক্ত যেকোন একটি যোগ্যতা থাকতে হবে।
TOEFL CBT SCORE 173 to 250
TOEFL IBT SCORE 61 to 100
IELTS (academic) 6.0 to 7.0
যেসব বিষয়ে পড়ানো হয়- মালয়েশিয়ার উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অসংখ্য বিষয়ে পাঠদান করা হয়া। নিচে মালয়েশিয়ায় উচ্চ শিক্ষার জন্য আদর্শ বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলো:
১.বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ২. ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি ৩. মেডিসিন ৪. ভেটেরেনারী মেডিসিন ৫.মর্ডার্ন ল্যাঙ্গুয়োজ এন্ড কমিউনিকেশন ৬.ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স ৭.বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ৮.চার্টার্ড একাউন্টেন্সি ৯.হেলথ সায়েন্সস ১০.ইঞ্জিনিয়াারিং ১১.এগ্রিকালচার ১২.ফরেস্ট্রি ১৩.ইসলামিক ষ্টাডিজ ১৪.সোশ্যাল সায়েন্স এন্ড হিউম্যানিটিজ ১৫.এনভায়ারোনমেন্টাল সায়েন্স ১৬.ডিজাইন এন্ড আর্কিটেকচার
বিদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য মালয়োমিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়া গুলো হচ্ছে:1. University of Malaya 2. University Technology Malaysia 3. University Tun Hussein Onn Malaysia 5. International Islamic University Malaysia (IIUM) 6. University Utara Malaysia 7. University Technical Malaysia Melaca 8. University Sains Islam Malaysia Tunku 9. Abdul Rahman University 10. UCSL University 11. University of Kualalumpur 12. Malaysia Theological University 13. Panang Medical College 14. Wawsan Open University 15. University Technology Petronas 16. Swinburne University of Technology Sarawak Campus 17. Al-Madinah International University 18. University of Parleys.
বিদেশী শিক্ষার্থীদের আবেদন প্রক্রিয়া :
আগ্রহী বিদেশী শিক্ষার্থীকে সর্বপ্রথম ইন্টারনেট থেকে তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়াগু্লাের একটি তালিকা প্রস্তত করতে হবে। অত:পর তাকে জানতে হবে তিনি যে বিভাগে ভর্তি হতে চান নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়াগুলোর সে বিভাগে ভর্তির আবেদনের শেষ সময়াসীমা কবে নাগাদ বিদ্যমান।
প্রতিষ্ঠানটির ভর্তি অফিস বরাবর ভর্তি তথ্য এবং আবেদন ফর্মের জন্য সরাসরি লিখতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়োর ওয়োবসাইট থেকেও সরাসরি আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করে নেয়া যেতে পারে।
কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অন-লাইন আবেদন প্রক্রিয়া চালু আছে।
ভর্তি অফিস থেকে আপনাকে আবেদনপত্র, ট্রান্সক্রিপ্ট এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংক্রান্ত সব তথ্য জানাবে।
আপনাকে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ংঃঁফবহঃ ঢ়ধংং এর জন্য আবেদন করতে হবে।
আপনার পক্ষে আপনার পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইমিগ্রেশন হেডকোয়ার্টার্স এর “পরিচালক, পাস ও পারমিট বিভাগ” বরাবর আবেদন করবে।
আবেদনের ১ মাসের ভেতর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করবে।
প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র এবং তথ্যাবলী সংগ্রহের জন্য আপনাকে কমপক্ষে ৬ মাস সময় হাতে রেখে প্রস্ততি শুরু করতে হবে।
আবেদনপত্র প্রক্রিয়াকরন, ঝঃঁফবহঃ ঢ়ধংং অনুমোদন এবং ভিসা ইস্যু ইত্যাদি সবকিছু মালয়োশিয়া থেকে সম্পন্ন করা হয়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র :
যথাযথভাবে পূরণকৃত আবেদনপত্র
সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের (এবং মার্কশীটের) ইংরেজি ট্রান্সক্রিপ্ট
স্কুল/কলেজ ত্যাগের ছাড়পত্র
TOEFL অথবা IELTS টেস্টের রেজাল্ট শীট
পাসপোর্টের ফটোকপি
আবেদন ফি পরিশোধের প্রমানপত্র
Security/Personal bond ফি পরিশোধের প্রমাণপত্র
Student pass এর ভিসা ফি পরিশোধের প্রমাণপত্র।
শিক্ষা ব্যয় : মালয়োশিয়ান পাবলিক/প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়াগুলোতে আন্ডার গ্র্যাজুয়োট পর্যায়ে টিউশন ফি ৮৮২১ মার্কিন ডলার থেকে ১৭৬৪২ ডলার (সর্বমোট)
মাস্টার্স পর্যায়ে খরচ পড়বে ৫৫৮৬ মার্কিন ডলার থেকে ১০২৯১ মার্কিন ডলার (সর্বমোট)
ডক্টরেট ডিগ্রীর গবেষণার জন্য খরচ পড়বে ৮৮২১ মার্কিন ডলার থেকে ১০২৯১ মার্কিন ডলার।
জীবনযাত্রার ব্যয় :মালয়োশিয়ায় একজন বিদেশী ছাত্র/ছাত্রীর জীবনযাত্রার বাৎসরিক ব্যয় ২৭০০ থেকে ৩০০০ মার্কিন ডলার।
কাজের সুযোগ:মালয়োশিয়ায় একজন বিদেশী ছাত্র/ছাত্রী তাদের পূর্ণকালীন (Full Time) শিক্ষা শুরু করার পর কাজের অনুমতির জন্য আবেদন করতে পারেন। একজন শিক্ষার্থী সেমিষ্টার পরবর্তী ছুটিতে অথবা ৭ দিনের অতিরিক্ত মেয়াদের কোন ছুটিতে সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘন্টা কাজ করার অনুমতি পেয়ে থাকেন। ক্যাম্পাসে কাজ করে যে উপার্জন করা সম্ভব তা দিয়ে টিউশন ফি জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব নয়। কাজ করতে আগ্রহী একজন শিক্ষার্থীর অবশ্যই Student pass থাকতে হবে।
যেসব ক্ষেত্রে কাজ পাওয়াা যায় :মালয়োশিয়ায় বিদেশী শিক্ষার্থীরা রেস্টুরেন্ট, পেট্রোল পাম্প, মিনি মার্কেট ও হোটেলগুলোতে কাজ করতে পারেন। এসব কাজ থেকে মাসিক ৩০০ থেকে ৭৫০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত উপার্জন করা সম্ভব।
অন্যান্য দেশে উচ্চশিক্ষা :
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে অনেক অভিভাবকই তাদের সন্তানকে পড়ালেখার জন্য দেশের বাহিরে পাঠানোকে কল্যাণকর মনে করেন। সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘বাংলাদেশের প্রায় ৪৭ ভাগ স্নাতকই বেকার থাকেন’।
সবমিলিয়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আসন সংকট, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের অভাব, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্টিফিকেট বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কারণে ছাত্র/ছাত্রীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। শুধু শুধু এক বুক স্বপ্ন দেখলেই বিদেশে উচ্চশিক্ষার দুয়ার খোলেনা। এর জন্য প্রয়োজন ধৈর্য, সঠিক পরিকল্পনা, দীর্ঘমেয়াদী কৌশল ও পূর্ব প্রস্তুতি। ভবিষ্যতে কোথায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রূপে দেখতে চাই, কোন ক্ষেত্রে নিজের পেশাজীবন গড়তে চাই এবং কীভাবে স্বপ্নপূরনের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চাই সেগুলো স্থির করতে হবে।
পথিমধ্যে সতর্কবাণী হল, বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় নাম সর্বস্ব অনেক এজেন্সী উচ্চ শিক্ষার বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে ছাত্র/ছাত্রীদের সাথে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন, অনেকেই এজেন্সীর খপ্পরে পড়ে সর্বস্বও খুইয়েছেন। উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য, কোথায়, কোন বিষয়ে, কেন পড়তে চাই ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর যদি ইতিবাচক হয় তাহলে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে কেউ চাইলেই যেকোন সময় ভর্তি হতে পারবেনা। ভর্তি প্রক্রিয়া বছরে দুইবার হয়। একটা হল উইন্টার সেশন এবং সামার সেশন। অর্থাৎ বছরের শুরুর দিকে ও শেষের দিকে। আবেদনকারীকে অবশ্যই আবেদন করার আগে কোর্স কনটেন্ট, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা ও অবস্থান, স্কলারশিপ, পার্টটাইম জব সুবিধা সহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় নিয়ে আগাতে হবে। আবেদন করার সময় বা তার আগে থেকেই প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলোর প্রস্তুতি ও পরীক্ষা শেষ করে ফেলতে হবে। যেমন- আইএলটিএস, টোয়েফল, জিআরই, জিম্যাট।
আইইএলটিএস : অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অধিকাংশ দেশে ইংরেজিতে দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে আইইএলটিএস (ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্য়েজ টেস্টিং সিস্টেম) গ্রহণ করা হয়। শুধু তা-ই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় তিন হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টোয়েফলের সঙ্গে সঙ্গে আইইএলটিএস স্কোর গ্রহণ করে। আইইএলটিএসে মোট স্কোর ৯। দুই দিনে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। প্রথম দিন চারটি মডিউলের মধ্যে রিডিং, লিসেনিং ও রাইটিং পরীক্ষা নেওয়া হয়। দ্বিতীয় দিন ইংরেজি ভাষায় বিশেষজ্ঞ পরীক্ষকেরা গ্রহণ করেন স্পোকেন টেস্ট। পুরো পরীক্ষাটি ‘পেপার-বেসড’।
টোয়েফল : ইংরেজি ভাষায় পেশাদারি দক্ষতা যাচাইয়ে প্রয়োজন হয় টোয়েফল (টেস্ট অব ইংলিশ অ্যাজ আ ফরেন ল্যাংগুয়েজ)। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ অন্য উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আবেদনে প্রথম শর্ত টোয়েফলে নির্দিষ্ট স্কোর পেতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পছন্দের বিষয় ভেদে স্কোর করতে হয় সর্বমোট ১২০ নম্বরের মধ্যে। টোয়েফলে চারটি ভাগ থাকে: রিডিং, লিসেনিং, স্পিকিং ও রাইটিং। টোয়েফলে ১২০ স্কোরের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড মান ১০০-এর মধ্যে। অর্থাৎ ১০০ পেলে ভালো। এই নম্বরটি পেতে প্রয়োজন দীর্ঘ সময়ের কঠোর প্রস্তুতি।
জিআরই
বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করতে উত্তর আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবশ্যক শর্ত জিআরই (গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশন)। ২০১১ সালের আগস্ট মাস থেকে বদলে গেছে জিআরই। নতুন পদ্ধতিতে জিআরইর স্কোর ৩৪০। ভার্বাল ও কোয়ান্টিটেটিভ সেকশনের স্কোরের ব্যাপ্তি ১৩০-১৭০।
‘অ্যানালিটিক্যাল রাইটিং সেকশনে’ দুটি রচনা ‘ইস্যু ট্রাস্ক’ এবং ‘আর্গুমেন্ট টাস্ক’-এর জন্য স্কোর ০-৬।
ভার্বাল সেকশন দুটি, কোয়ান্টিটেটিভ দুটি সেকশন এবং একটি পরীক্ষামূলক সেকশন উত্তর দিতে হয়। পরীক্ষামূলক সেকশনটি ভার্বালও হতে পারে অথবা কোয়ান্টিটেটিভও হতে পারে। সেকশনগুলোতে প্রতিটি প্রশ্নের স্কোর সমান। প্রথম সেকশনগুলোতে সর্বোচ্চ সঠিক উত্তর দিলে ‘ডিফিকাল্টি লেভেল’ ভিত্তিতে পরবর্তী সেকশনগুলোতে উচ্চমাননির্ভর প্রশ্ন দেওয়া হয়।
জিম্যাট
ব্যবসায় প্রশাসনভিত্তিক অ্যাকাউন্টিং, ফিন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং বিষয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামে স্নাতকোত্তর অথবা এমবিএ করতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালগুলোতে প্রয়োজন হয় জিম্যাট (গ্র্যাজুয়েট ম্যানেজমেন্ট অ্যাডমিশন টেস্ট)। জিম্যাট পরীক্ষায় চারটি সেকশনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা যাচাই করা হয়। এগুলো হলো: ‘ভার্বাল’, ‘কোয়ান্টিটেটিভ’, সম্প্রতি চালু হওয়া ‘ইন্টিগ্রেটেড রিজনিং ও ‘অ্যানলিটিক্যাল রাইটিং অ্যাসেসমেন্ট’। জিম্যাট স্কোরের ব্যাপ্তি ২০০ থেকে ৮০০। এখানে শেষের দুটি সেকশনের স্কোর অন্তর্ভুক্ত নয়। ‘ভার্বাল’ ও ‘কোয়ান্টিটেটিভ’ সেকশনের স্কোর শূণ্য থেকে ৬০ পর্যস্ত। ধাপে ধাপে একেকটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদানের মাধ্যমে স্কোর বাড়তে থাকে। পরীক্ষার্থীর প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক সমাধানের মধ্য দিয়ে ‘ডিফিকাল্টি লেভেল’ বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে স্কোর। ‘ইন্টিগ্রেটেড রিজনিং’-এর স্কোর ১-৮ এবং ‘অ্যানালিটিক্যাল রাইটিং অ্যাসেসমেন্ট’ ০-৬।
সুতরাং বর্তমান গ্লোবাল যুগে পড়াশুনার জন্য বিদেশে যাওয়া অনেক সহজ কিন্তুÍ ভালভাবে খোজ খবর নিয়ে যেতে হবে। নতুবা অনেক সমস্যায় পড়তে হবে ।
মন্তব্য